আজ সকল সাস্থ্য সচেতন মানুষের দিন বিশ্ব যোগ দিবস ।যোগের সাথে সংযোগ ভারতের দক্ষিণ এশিয়ার দেশে যোগের বিবর্তন ক্রমান্বয়ে হয়েছে সেগুলিকে আলোচনা করতে যাওয়ার আগে যোগ বলতে কি বোঝায় যোগ শব্দের অর্থ সম্বন্ধে জানি।
যোগ শব্দটির উৎস সংস্কৃত মূল ‘যুজ’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।যোগ মূলত একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে আধ্যাত্মিক চেতনা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয় সুস্থ জীবনযাপনের বিজ্ঞান।।
মন এবং শরীর, মানুষ এবং প্রকৃতির একত্রিত করে সাদৃশ্য নির্দেশ করে এই আধ্যাত্মিক , চেতনা বিজ্ঞান।
আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে মহাবিশ্বের প্রকাশে আমাদের অভিব্যাক্তি কোয়ান্টাম ফার্মামেন্টের একটি প্রকাশ মাত্র।।
তাহলে বিজ্ঞানের সঙ্গে যোগের, যোগ স্থাপন কি ভাবে যোগী তার সাধনা তার মাধ্যমে অস্তিত্বের একত্ব অনুভব করেন ,সরল ভাষায় বললে নিজের অস্তিত্ব উৎপত্তি প্রগাঢ় অনুধাবন ,নিজেকে প্রকৃতির তত্ত্বের উপকরণ বলে চিন্তা করতে শেখা।তাকে যোগী বলা হয়। নির্বাণ বা মোক্ষ নামে নিজের সক্ষমতার রাজ্যে যোগ সাধনা সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে ,পারে।
বাস্তব জীবনের নানা সমস্যার সাধারণ সমাধানের একটি রাস্তা উপায় এই যোগ সাধনা।
যোগের উৎস
আধুনিক পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যোগের প্রথম উৎস। ঐতিহাসিক নিদর্শন যে ধারণা গুলি উঠে আসে সেখানে সভ্যতার ভোরে সাধনার উৎসরণ শুরু হয়েছে যা আজও প্রস্ফুটন করে আছে ।
যোগ সাধনায় আধ্যাত্মিক চেতনা
যোগবিদ্যায়, শিবকে প্রথম যোগী বা আদিযোগী হিসাবে বর্ণনা করা হয়। হিমালয়ের কান্তিসরোবর হ্রদের তীরে তার আধ্যাত্মিক চেতনা জ্ঞান পৌরাণিক সপ্তর্ষি বা “সপ্ত ঋষিদের” মধ্যে ঢেলে দিয়েছিলেন ।
সেই ঋষিরা এই বিশেষ বিজ্ঞান কে ছড়িয়ে দেন দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, আধুনিক পণ্ডিতরা বিশ্বজুড়ে প্রাচীন সংস্কৃতির মধ্যে।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন যোগের সাক্ষী হিসাবে প্রমাণ ,দেয়
শুধু আধ্যাত্মিক কাহিনী নয় প্রমাণের ভিত্তিতে দাবী করা হয় যোগের উপস্থিতি দক্ষিণ এশিয়া তে কি ভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।
সিন্ধু সরস্বতী উপত্যকা সভ্যতার সীলমোহর এবং জীবাশ্মের অবশেষ যোগের বিভিন্ন উপকরণের চিত্রগুলি প্রাচীন ভারতে যোগের উপস্থিতি নির্দেশ করে।এখানেও আধ্যাত্মিক চেতনায় বাস্তব জীবনে সংযোগ পরিলক্ষিত হয়েছে। দেবীর মূর্তির সীলগুলি তন্ত্র যোগের ইঙ্গিত দেয়।বৈদিক ও উপনিষদ,রামায়ণ ,মহাভারত প্রভূত জায়গায় যোগের উপস্থিতি নির্দেশ করেছে।
একটি আদিম বা বিশুদ্ধ যোগের প্রক্রিয়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পরিচিত ছিলো।।
যোগ সাধনায় প্রকৃতি তত্ত্বীয় উপস্থিতি
যোগ সাধনায় প্রকৃতি তত্ব যে প্রধান প্রগাঢ় সেটির উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় সূর্য নমস্কার’ প্রথার মাধ্যমে।
বৈদিক যুগে সূর্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হত । সূর্য নমস্কার প্রাণায়াম ছিল প্রাত্যহিক আচার, সেটি দ্বারা মনের অন্দরের অন্ধ কার নিরসন হতো।
প্রাক-বৈদিক যুগ মহর্ষি পতঞ্জলি যোগসূত্র
মহান ঋষি মহর্ষি পতঞ্জলি তাঁর যোগসূত্রের মাধ্যমে যোগের অনুশীলন অর্থ সেই সম্বন্ধে জ্ঞান কে লিপিবদ্ধ করেছিলো।যা বর্তমানেও যোগ সাধনায় মুখ্য বিবেচক নির্দেশনার জন্য ব্যবহৃত হয়ে যাচ্ছে।
যোগের ঐতিহাসিক প্রমাণ
প্রাক-বৈদিক যুগে (2700 খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এবং তারপরে পতঞ্জলির যুগ পর্যন্ত যোগের ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক মহা কাব্য , রচনা তে যোগের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে।তাদের মধ্যে বেদ (4), উপনিষদ (108), স্মৃতি, বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা, জৈন ধর্ম, পাণিনি, মহাকাব্য (2), পুরাণে যোগের পরিচিতি আছে।
যোগের ইতিহাস এবং বিকাশের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় নিদর্শন।
যোগ সূত্র এবং ভগবদ্গীতা হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় লেখনী তে 500 খ্রিস্টাব্দ – 800 খ্রিস্ট পূর্বাদো পর্যন্ত ব্যাসের ভাষ্যগুলি যোগের পরিচয় অস্তিত্ব রক্ষায় শ্রেষ্ট নিদর্শন।
ভারতের দুই মহান ধর্মগুরু – মহাবীর এবং বুদ্ধকে যোগের প্রচলন ত্বরান্বিত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
মহাবীরের পঞ্চ মহাব্রত- এবং বুদ্ধের অষ্টমগ্গা বা অষ্টমুখী পথ যোগ সাধনা বিষয়ে প্রাথমিক প্রকৃতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই পর্যায়ে উল্লেখ্যযোগ্য ভগবদ্গীতা , সেইখানে জ্ঞান যোগ, ভক্তি যোগ এবং কর্ম যোগের ধারণাকে বিশদভাবে উপস্থাপন করেছে। এই তিন শ্রেণী যোগের মানুষের জ্ঞানের সর্বোচ্চ উদাহরণ আজও মানুষ গীতায় দেখানো পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করে সস্তি খুঁজে নেয়।
ব্যাস দ্বারা মনের দিকটি যোগ সূত্রে উল্লেখ্য , মন এবং শরীর উভয়ই সাম্যের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে।
সেই ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যাক্তির মধ্যে রামানুজাচার্য ,আচার্যত্রয়-আদি শঙ্করাচার্য, উল্লেখ্যযোগ্য ।
আধুনিক যুগ যোগের উপস্থিতি
মহান যোগাচার্য- রমণ মহর্ষি, রামকৃষ্ণ পরমহংস, পরমহংস যোগানন্দ, বিবেকানন্দ প্রমুখ রাজ যোগের বিকাশে অবদান রেখেছিলেন। গোরক্ষশতকমের ষড়ঙ্গ-যোগ, হঠযোগপ্রদীপিকের চতুরঙ্গ-যোগ, ঘেরান্ড সংহিতার সপ্তাঙ্গ-যোগ,যোগ, শাস্ত্রের সাধনার বিভিন্ন দিক , এসেছিলো
বিশ্বের অন্যতম প্রধান যোগ শিক্ষক বিকেএস আয়েঙ্গার তার যোগ সাধনা যেটি আয়ঙ্গার যোগ নামে পরিচিত। তার মতে যোগ সাধনা প্রধানত দুই প্রক্রিয়া নীতি মেনে চলে হঠ যোগ এবং আসন (ভঙ্গি) । যোগ সাধনা প্রধানত মন এবং শরীর নিয়ে আলোচনা করে ।যোগের বিভাগ সুদূর প্রসারী। প্রথমে যে আলোচনা করেছিলাম নির্বাণ বা মোক্ষ নামে নিজের সক্ষমতার রাজ্যে যোগ সাধনা সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে ,পারে। নিজের আত্ম চিন্তনের সাথে মহাবিশ্বের সংযোগ যোগ সাধনা ।আমাদের শারীরিক মানচিত্রের প্রতিটি কোষে শক্তির উৎসরন করে যোগ। আধ্যাত্মিক , বৈজ্ঞানিক চেতনার উপলব্ধি এবং সাদৃশ্যের সর্বোচ্চ স্তর অর্জন করতে প্রধান ভূমিকা পালন করে যোগ ।” যোগ দিবসের শুভেচ্ছা । আপনাদের আধ্যাত্মিক , বৈজ্ঞানিক চেতনার উন্নয়ন হোক যোগ অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে।সমৃদ্ধ হোক পৃথিবী।