বাঙালি মহিলা গর্বিত হতে হয় তার চেষ্টা জ্ঞান দেখে, কথা হচ্ছিলো আই পি এস ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়(IPS Indira Mukhopadhyay)কে নিয়ে।
বাঙালি আবার মহিলা আই পি এস ,পুলিশের মতো প্রফেশন ,একটু বাধাগ্রস্ত , সামাজিক খটকা ছিলোই,এখনও আছে।
কিন্তু সামাজিক সেই ধান ধারণা কে উপেক্ষা করে সমাজের গঠনে বলা ভালো সমাজ পরিচালনায় আইনের বাঁধনে যে ব্যাক্তি বাঁধতে চেয়েছিলেন, তিনি মহিলা আই পি এস ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।
তার প্রফেশনাল কেরিয়ারে তিনি চড়াই উতরাই দেখেছেন ।তবে তিনি এই প্রফেশনে আসার আগে ও তার কর্ম পন্থা সম্পাদন যেনো বর্ণিল, নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার যোগসূত্র কাজের সুত্রে টের পাচ্ছেন ঠিকই ।
ইন্দিরার বড়ো হয়ে ওঠা ও শিক্ষা ও কর্ম জীবন
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় আই পি এস , ১৯৮৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর তার জন্ম । স্কুল ও কলেজ জীবন ভুটান ও কলকাতায়।তার কলেজ জীবনে সাবজেক্ট ছিলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান। ইউ পি এস সি তে তিনি এই পছন্দের সাবজেক্ট কে বেছে নিয়েছিলেন।
পুলিশের চাকরিতে আসেন নি তখনও ইন্দিরা ছিলেন তথ্য প্রযুক্তি কর্মী।পোস্ট গ্রাজুয়েট এই মহিলা যখন চাকরী থেকে ছাঁটাই হয় ,তিনি ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন।
কর্মজীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে থাকেন।একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তিনি এই কথা জানিয়েছিলেন।
ইন্দিরার চাকরী বাতিল হয় ২০০৮ সালে সেই সময় থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন কিছু করে দেখাবেন।অতঃপর ২০১৩ সালের ইউ পি এস সি পরীক্ষায় বসেন সফল হয়েছিলেন পরীক্ষায়।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্যাডারের আইপি এস ইন্দিরা( IPS Officer West Bengal ) কাজ শুরু করেন ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে।দৃপ্ত এই আই পি এস অফিসারের চোখে তখন সপ্ন ছিলো ,রাজ্য কে আইনি পথে সঠিক উপায়ে পরিচালনা করা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে ইন্দিরার। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমাও অর্জন করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইউপিএসসি-তে তাঁর অপশনাল বিষয় ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস।
তথ্য প্রযুক্তি কর্মীর চাকরি যায়, তখন তিনি চাকরির নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সরকারি চাকরি (Goverment Job) কে নির্ভরযোগ্য কেরিয়ার বলে মনে করেছিলেন।
এরপর ইউপিএসসি-র(UPSC Civil Service) জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ও পরীক্ষা দেন। ২০১৩ সালে পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন।
আইপিএস ইন্দিরা ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্যাডারের ২০১৩ সালের ব্যাচের অফিসার। তিনি কাজ করেছেন দক্ষিণ দিনাজপুর ,ঝাড়গ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুর তে।
**” তিনি নিজের কর্ম জীবনে ও পশ্চিমবঙ্গের পটভূমিতে প্রশাসনিক পদে এক মহিলা হয়ে আরো মহিলাদের উৎসাহিত করেছেন।একটি ইউটিউব চ্যানেলে ইন্টারভিউ তে তিনি বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চাকরি তে পুলিশের মতো পদে মহিলাদের নিয়োগ নিয়ে বলেন ” মানুষিকতার পরিবর্তন হচ্ছে ,জনগন ও পুলিশ বুঝতে শিখছে পরিস্থতি ।সহযোগিতা বেড়েছে জনগণের।মহিলা পুলিশ পদেও এখন নিয়োগ বৃদ্ধি হয়েছে।এটাকে তিনি সদর্থক বলেই মনে করেন”
আর জি কর ইস্যুতে হয়েছিলেন বিতর্কিত ,সেই ইন্টারভিউ তে তাকে পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক পরিস্থিতি মহিলাদের যৌন নির্যাতনের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হলে তিনি বলেন ” শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় সমগ্র ভারতবর্ষে ই তুলনা করে দেখতে হবে তামিলনাড়ুর কথা তিনি তুলনা করেন। পশ্চিমবঙ্গ বা যে কোনো রাজ্যের কর্ম ক্ষেত্রে অথবা পুলিশ হিসাবে মহিলা ,সাধারণ মহিলা যে হোক ,তিনি বা এস পি পদমর্যাদার যে কোনো অফিসার যখন ই খবর পেয়েছে যথাযথ ব্যাবস্থা নিয়েছে “
আরজি কর ইস্যু তে ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
রাজ্যে ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাকাণ্ড ,সেই কর্ম ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের ব্যাপারে তিনি এসে সংবাদ মাধ্যমে যে বয়ান দিয়েছিলেন ,সেই নিয়ে নিন্দায় সরব হয় রাজনীতিবিদ,বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ মানুষ।
তিনি বলেছিলেন ৫১ ফুটের সেমিনার রুমের ৪০ ফুট ঘিরে রাখা হয়েছিল।এগারো ফুট কর্ডন এরিয়া এটি নাকি ক্রাইম স্পষ্ট ,এছাড়া নীল চাদর থেকে সবুজ চাদর ইত্যাদি বিতর্ক তো ছিলোই।
তিনি যে তথ্য ছবি তে দেখিয়েছিলেন এক ব্যাক্তি কে দেখিয়ে যে টি নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ওই ব্যাক্তি তাদের হমি সাইড ডিপার্টমেন্টে র কর্মচারী বলছিলেন।
আরজি কর নিয়ে বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাঠানোর দাবি তোলেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।
ইন্দিরার ঈশ্বরতুল্য সম্মান পাওয়ার ঘটনা
ইন্দিরা কে নিয়ে এই বিতর্ক গুলির মাঝে ,তার প্রশংসিত কাজ নিয়ে ও বলতে হয়।২০১৭ সালে সংবাদ পত্রে ও মিডিয়া তে একটি নাম প্রচারিত হয়।তিনি তখন উত্তর দিনাজপুরে এস পি পদে নিয়োগ পেয়েছেন ।
তিনি রায়গঞ্জ থেকে ফিরছিলেন হঠাৎ ই এক মহিলা কে রাস্তার পাশে তিনি বসে থাকতে দেখেন ।ইন্দিরার সন্দেহ হয়,ফেব্রুয়ারি মাসের ঠাণ্ডায় রাস্তার পাশে বসে থাকা মহিলা কে দেখে তিনি প্রশ্ন করে ।মহিলা ছিলেন ইন্দিরার দিক থেকে উল্টো দিকে মুখ করে।
মহিলা কে বারংবার তার রাস্তার পাশে বসে থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন করলেও উত্তর পাওয়া যায় না।
মহিলার গায়ে হাত দিতেই উল্টে পরে যায় মহিলাটি ,তার গলার নলি কাটা ছিলো।রক্ত বের হচ্ছিলো। তৎখনাৎ রায়গঞ্জ হসপিটালে(Raygang Hospital) নিয়ে যাওয়া হয়।মহিলা প্রাণে বাঁচেন ।সেই দিন থেকে রায়গঞ্জে র মানুষ তাকে ঈশ্বরতুল্য মনে করে।
ইন্দিরার নতুন বিতর্ক
আরজিকরে পড়ে এদিন (৩০ মে ২০২৫ ) শুক্রবার এস এস সি ২০১৬ চাকরী বাতিল শিক্ষকদের মিছিলের মধ্যে পুলিশি হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এদিন শিয়ালদহ স্টেশন ( Sialdah) এলাকায় চাকরী বাতিল শিক্ষকেরা এক একে জমায়েত হয়।
এদিন স্টেশন চত্বর ছিলো পুলিশ ভর্তি।এদিন বেছে বেছে শিক্ষকদের প্রিজন ভ্যানে তুলে আটক করা হয়।
তাদের বিক্ষোভ শুরু হলো না পুলিশ কি করে হস্তক্ষেপ করতে পারে।অবৈধ জমায়েত বলে ঘোষণা করতে পারে উঠছে প্রশ্ন।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে ও ডি সি সেন্ট্রাল কোলকাতা পুলিশ ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিনের সমাবেশ নিয়ে ইন্দিরার বক্তব্য( IPS Indira Mukhopadhyay Statement on Teacher Agitation)
- ল এন্ড অর্ডার পুলিশের সাবজেক্ট আইন ভাঙলে পুলিস কে নেসেসারি অ্যাকশন নিতেই হবে।
- বিক্ষোভ শুরু করেছে কি না বিক্ষিপ্ত ভাবে চলে এসেছে কি না এনায়ারি করে দেখতে হবে।
- শিক্ষকদের আটক দরকার ছিলো কি না আলাদা কথা, এক্সেপশনাল সিচুয়েশন পুলিশ কে এক্সেপশনাল কাজ করতেই হয়।
- বিক্ষোভ শুরু হয়েছে কি হয়নি সেটা চাকরিপ্রার্থীদের থেকে কমেন্টে নিলে ঠিক হয়।
শিক্ষকের কলার চেপে নিয়ে যাওয়া নিয়ে – খতিয়ে দেখবো বলেন ,সেই পরিস্থিতির জন্য ছিলো কি না দেখবো। - আমাদের মনে হয়েছে অতীতেও ল এন্ড অর্ডার সিচুয়েশন কন্ডিশন ,ঠিক নয় বলে অ্যাকশন নিয়েছি।
- বিক্ষোভের পারমিশন চেয়ে মেইল করা হয়েছিলো কি না আমি কি করে বলবো
- শিয়ালদহ থেকে অর্ধ নোগ্ন হয়ে বিক্ষোভের কথা ছিলো মনে হয় , পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করলে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ,তাদের অ্যারেস্ট করতে হবে।
- আমি ডিসি সেন্ট্রাল আমার এলাকায় ল এন্ড অর্ডার প্রবলেম হলে ব্যাবস্থা নিতে হবে।
ডিসি সেন্ট্রালের বক্তব্য তে যে ফাঁক ফোকর আছে সেই নিয়ে প্রশ্ন করছে শিক্ষকেরা
তাদের বক্তব্য
- ” যে বিক্ষোভ শুরুই হলো না সেখানে আইন শৃঙ্খলার অবনতির প্রশ্ন আসছে কি করে”!!!
- নিরস্ত্র এক জন শিক্ষক আইন ভঙ্গ কি করে করলো!!!
শিক্ষকদের বিক্ষোভ তিনি জানতেন না ,সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্নে ‘ লালবাজারে শিক্ষকেরা ইমেইল করেছিলো
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : প্রথমে সেটা আমি জানবো কি করে।আবার তিনি বলেন অর্ধনগ্ন মিছিলের শিয়ালদহ থেকে ছিলো মনে হয়।
শিক্ষকদের প্রশ্ন : দোকান ,রেল স্টেশন , রাস্তা থেকে খুঁজে অ্যারেস্ট এর দরকার কি ছিলো।তারা তো বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন না।
ইন্দিরার যুক্তি : ল এন্ড অর্ডার পুলিশের সাবজেক্ট আইন ভাঙলে পুলিস কে নেসেসারি অ্যাকশন নিতেই হবে।
তিনি আরো বলেন বিক্ষোভ শুরু করেছে কি না বিক্ষিপ্ত ভাবে চলে এসেছে কি না এনকয়েরি
করে দেখতে হবে।
অর্থাৎ তিনি নিজেই এই ব্যাপারে জানেন না বিক্ষোভ শুরু হয়েছিলো কি না।অথচ তিনি বলছেন সাংবাদিকদের আপনারা উপস্থিত ছিলেন দেখেছে। সমস্ত ব্যাপার।
তিনি ও ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে কি না তিনি সন্দিহান।
এই রকম নানা জটিলতা দিয়ে ভরপুর উত্তর এদিন তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলেন।
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বাঙালি আই পি এস কে( Bengali IPS Indira Mukhopadhyay ) নিয়ে লেখার শুরুতেই যে তর্জম্মা করেছিলাম।
তার এখনকার ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে বীরাঙ্গনা এই মহিলা কি এখন রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন !!!
এক একটি বিতর্কে তুরুপের তাস কি এই মহিলা পুলিশ আই পি এস অফিসার !!!
ইন্দিরার মতো নারী ও পুরুষ পুলিশ কর্মীদের কি চাকরী খোয়ানোর ভীতি কাজ করছে না হলে অনুব্রত মণ্ডলের মতো নেতারা সাহস পায় আই সি কে থ্রেট দেওয়ার,না কি বদলির ভীতি !!!
দুর্নীতির বদ্ধ পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে চাইছেন ইন্দিরিরা।
রাজ্যের পুলিশ কর্মীদের সংগঠন থেকে কি বিক্ষোভ উঠে আসবেনা যখন তারা এই দুর্নীতির স্বীকার।।রাজ্যের শিক্ষিত ২৬০০০ যুবক,যুবতী চাকরী হারিয়ে আজ ,রাস্তায়,সর্বস্বান্ত হয়ে তাদের নিরাপদ সরকারি চাকরী ফিরে পাওয়ার লড়াই করে চলেছে।
সেই এক ইন্দিরা যেমন ” ইতিহাসে চাকরির নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিলো”
ইন্দিরা দের এখনের কার্যকলাপ সুদূর অতীতে র দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে।
সেদিন হয়তো অবসরে বসে এই অফিসারেরা বলবেন ,রাজ্যের সাধারণ মধ্যবিত্তের শিক্ষার আলোয় ,অর্থাৎ বিদ্যালয় গুলি বন্ধের তথাপি শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংস ,সামাজিক কাঠামো অবনমনের একজন পার্ট হিসাবে তারা যুক্ত ছিলেন।
যে আই পি এস ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় (IPS Indira Mukhopadhyay ) অথবা আসন্ন ইন্দিরা রা পুলিশ হিসাবে সমাজে নায়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করতে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন ,দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি তাদের ও কি এই ইন্দিরার মতো তৈরি করে দেবে না ,প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।!!!