শিক্ষা দুর্নীতির ভাগীদারদের হাত ঘুরে টাকা যেতো কিং পিন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির কাছে জেরায় স্বীকার কূন্তলের । 19 কোটির মধ্যে 15 কোটি টাকা সাক্ষী রেখে পার্থর কাছে দেন তিনি বলে জানান E D কাছে ।
শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য অর্থের বিনিময়ে অবৈধ নিয়োগ এর অন্যতম চক্রের প্রধান পান্ডা ’ হিসেবে অভিযোগের তীর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিকেই। প্রাথমিক তদন্তের পরে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি, তাপস মণ্ডল এর আগে মিডিয়া এবং ED আধিকারিকদের কাছে জানিয়েছিলেন 19 কোটির তথ্য। সেই টাকার সাড়ে ১৫ কোটি টাকার হিসাব মিললো এবার পার্থের কাছেই সেই টাকা পৌঁছে দিতেন কুন্তল ঘোষ।
কুন্তল এর কথা অনুযায়ী গোপাল দলপতি যিনি তাপস ঘনিষ্ঠ টাকা দেওয়ার সময় সাক্ষী হিসাবে থাকতেন ইডি সূত্রের খবর।
তাপস ছিলেন বেসরকারি কলেজের সংগঠণের সভাপতি ।তিনি 2016 থেকে 2019 পর্যন্ত পরের পর টাকা তুলে সেটা পৌঁছে দিতেন কুন্তলের কাছে ; প্রায় সাড়ে ১৯ কোটির নগদ অর্থ তিনি কুন্তলকে দেন সেই টাকা হাত ঘুরে যেতো পার্থ চ্যাটার্জির কাছে; সেই সংক্রান্ত একটি খতিয়ানও তদন্তকারীদের কাছে পেশ করেছেন কুন্তল।
পার্থর নাকতলার অফিস বা তার আবাসনের কাছে রেস্তোরায় পৌঁছে যেতো টাকা কুন্তলের বয়ান অনুযায়ী সেখানে প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সচিবের হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন তিনি। কুন্তলের দাবী অনুযায়ী নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু’টি ফ্ল্যাট পাওয়া নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকার মধ্যে রয়েছে এই সাড়ে ১৫ কোটি টাকা ।
বর্তমানে গোপাল ও পার্থ দুজনেই জেলে আছেন।বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় গোপাল এখন তিহাড় জেলে আছেন। পার্থ বর্তমানে প্রেসিডেন্সি জেলে। কুন্তলের এই বয়ান শোনার পর Enforcement Directorate আধিকারিকরা পার্থ ও গোপালকে জেরা করার কথা ভাবছেন।
কেন্দ্রীয় সংস্থার এক পদস্থ কর্তা জানান, ‘‘ওই দু’জন জেলে আছেন। তাই তাঁদের নাম করার কৌশল নিতে পারে কুন্তল। তদন্তকারীদের বিপথে চালিত বা বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যেও এমন বয়ান পেশের সম্ভাবনা করছেন তিনি।’’
তৃণমূল কংগ্রেসের যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি আবার কুন্তল ঘনিষ্ঠ শাসক দলের এই নেতা কে বুধবার তলব করা হয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতিতে শান্তনুও জড়িত থাকার প্রমাণ উঠে আসছে। শান্তনুর হুগলির বাড়িতে হানা দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতির বহু নথি । এ দিন ডাকা হয়েছিল তাপসকেও ইডি সূত্রের দাবি, কুন্তলের ও তাপস ও শান্তনুকে বসিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই সমস্ত ঘটনার ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে।
ইডি-র দাবি, গোপাল যে তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাপস তা কবুল করেছেন। তাপস তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে কয়েক জন প্রার্থী ছিল গোপালের। তাঁদের কোনও ভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য গোপাল তাঁকে একাধিক বার অনুরোধ করেছিলেন। তাপস শেষে গোপালকে পাঠিয়ে দেন কুন্তলের কাছে। তাপসের বয়ান অনুযায়ী, এই ঘটনার পর থেকে তাঁর সঙ্গে গোপাল তেমন যোগাযোগ রাখতেন না, কুন্তলের সঙ্গেই তিনি কথা বার্তা বলতেন।
তদন্তকারীদের দাবি, তাপসের কাছ থেকে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ও গোপালের মাধ্যমে আরও সাড়ে ১০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন কুন্তল এবং সে-কথা তিনি জেরায় স্বীকার করেছেন।
ঘটনায় জড়িত পার্থের এক আপ্ত-সহায়ক ও সচিবের নামও তদন্তকারীদের সামনে এনেছেন কুন্তল। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছিল সিবিআই ও ইডি। কুন্তলের বয়ানের ভিত্তিতে ফের তাঁদের ডাকতে পারে। ইডি-র দাবি, কুন্তলের বয়ানের ভিত্তিতে আদালতে আবেদন করে জেরা করার কথা জানতে পারে পার্থ আর গোপালকেও।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ২০১৬ দপ্তর হিসাবে নিউ টাউনের চিনার পার্কের দু’টি ও ইএম বাইপাস সংলগ্ন বহুতলের তিনটি ফ্ল্যাট কুন্তল ও শান্তনু ব্যাবহার করতেন । বাইপাসের ফ্ল্যাটের কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতেন শান্তনু । তদন্তকারীদের কাছে তাপসের বয়ান অনুসারে ওই ফ্ল্যাটে শান্তনুর সঙ্গে একাধিক বার দেখা সাক্ষাৎ হয়। ‘কুন্তল সব চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে’ বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন শান্তনু। ইডি-র দাবি, সেই কারণেই দুর্নীতির মূল মাথা খুঁজতে বুধবার কুন্তল, তাপস ও শান্তনুকে মুখোমুখি বসিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ জেরা করা হয়েছে।
ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র জানিয়েছেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে নানা তথ্য উঠে আসে। সেই পুরো বিষয়টি এখন তদন্তসাপেক্ষ ।’’ পার্থ ও কুন্তলের আইনজীবী সেলিম রহমান জানান, ‘‘এটি বিচারাধীন বিষয়। এই বিষয় এখন কোনও মন্তব্য করব না। আমার যা বক্তব্য, আদালতে শুনানির সময় জানাব।’’